শুক্রবার (১৫ আগস্ট) এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিকেলে ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির একটি গম্বুজ ধসে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দেয়া হলে সেখানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি গম্বুজের একাংশ ধসে পড়ে। ছুটির দিন হওয়ার সে সময় সমাধিক্ষেত্রের অন্দরে অনেক পর্যটক ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। দমকল বিভাগের মোট পাঁচটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে।
হুমায়ুন ছিলেন মুঘল সম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট। তার পুরো নাম নাসির-উদ-দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন। তিনি তার বাবা বাবরের মৃত্যুর পর ১৫৩০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজত্বকালে তিনি শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাসনে ছিলেন। পরে পারস্যের শাহের সহায়তায় তিনি নিজের সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু এর মাত্র এক বছর পর তার মৃত্যু হয়।
হুমায়ুনের সমাধি দিল্লির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অসাধারণ উদাহরণ এবং ভারতের প্রথম বাগান-সমাধি হিসেবে পরিচিত। এর নির্মাণ কাজ ১৫৬৫ সালে সম্রাট হুমায়ুনের প্রথম স্ত্রী বেগা বেগম (হাজি বেগম নামেও পরিচিত) শুরু করেন এবং এর স্থপতি ছিলেন পারস্যের মীরক মির্জা গিয়াস।
এই সমাধিটি মূলত লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি, আর এর স্থাপত্যে পারস্যের ‘চারবাগ’ (চার ভাগে বিভক্ত বাগান) এবং ভারতীয় শিল্পকলার এক চমৎকার সংমিশ্রণ দেখা যায়। এই সমাধির নকশা ও নির্মাণশৈলী পরবর্তীকালে বহু মুঘল স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো আগ্রার বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল। যা প্রায় এক শতাব্দী পরে নির্মিত হয়েছিল।
হুমায়ুনের সমাধির কাছে মুঘল রাজবংশের প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি সদস্যের কবর রয়েছে, তাই একে ‘মুঘল রাজবংশের নেক্রোপলিস’; (সমাধিক্ষেত্র) বলা হয়। এর অসাধারণ ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বের কারণে এটি ১৯৯৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা লাভ করেছে।
শুধু ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এখানে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছেন। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। ২০২২–২৩ অর্থবছরে সমাধিতে ৬ লাখ ১৫ হাজার দর্শনার্থী এসেছিলেন, যা ২০২১–২২ সালের ২ লাখ ৩৮ হাজার দর্শনার্থীর তুলনায় অনেক বেশি।
স্থাপনাটির সংরক্ষণে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তর (এএসআই) ও আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার (একে টিসি) যৌথভাবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রকল্প চালিয়েছে।
১৯৯০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের প্রথমভাগ পর্যন্ত চলা এই সংস্কারে মোঘল বাগান পুনর্গঠন, নষ্ট পাথরের অংশ প্রতিস্থাপন, ঐতিহ্যবাহী পানির চ্যানেল পুনঃস্থাপন এবং ক্ষতিকর সিমেন্টের স্তর অপসারণের মতো কাজ করা হয়।
শুক্রবারের দুর্ঘটনার পর এই শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এখনো ধসের সঠিক কারণ জানা যায়নি এবং অবশিষ্ট কাঠামোর অবস্থা সম্পর্কে কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয়নি। উদ্ধার কাজ শেষ হলে কাঠামোগত জরিপ ও মূল্যায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
No comments:
Post a Comment