'মাদকাসক্ত সেনারা পুরুষদেরও ধর্ষণ করছে' - সময় আমাদের (somoy amader)

শিরোনাম


Monday, 3 November 2025

'মাদকাসক্ত সেনারা পুরুষদেরও ধর্ষণ করছে'


সময় ডেস্ক :
সুদানের বেসামরিক জনগণের উপর আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) যে ধরণের নিষ্ঠুর আক্রমণ করেছে তা সম্ভবত ইতিহাসের সব রোমহর্ষক গল্পকে হার মানিয়ে দিয়েছে। তাদের নৃশংসতার তালিকা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে।


সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএর নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষরা এখন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে।


দারফুরের সংকট ব্যবস্থাপক, সাহায্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) এর আরজান হেহেনক্যাম্প এ রকমই কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।


জানা গেছে, শত্রুর মনোবল ভেঙে ফেলতে অনেক ক্ষেত্রেই আরএসএফ কমান্ডাররা অতিরিক্ত মাদকাসক্ত সৈন্যদের দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিশু সৈনিকও আছে। আর এর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে তারা নারীদের পাশাপাশি  পুরুষদেরও ধর্ষণ করছে।


এল-ফাশের দখলের পর যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছেন তাদের একজন আলখেইর ইসমাইল। এই তরুণ, দারফুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসে বলেন, “রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর সময় আরএসএফ প্রায় ৩০০ জনকে আটক করে। আমি সেই দলের অংশ ছিলাম। কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিচিত ব্যক্তির অনুরোধে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য সবাইকে হত্যা করা হয়।”


অন্য একজন ২৬ বছর বয়সী নারী জানান, তার স্বামী সন্তানদের বাঁচাতে মুক্তিপণ দেন, কিন্তু পরে তার সামনেই তাকে হত্যা করা হয়।


এক ১৯ বছর বয়সী তরুণী বলেন, “আমাকে ধর্ষণ করা হয়, তার আগে জানতে চাওয়া হয়েছিল আমি কুমারী কি না।”

 

অন্যদিকে, তাহানি হাসান নামের এক নারী বলেন, “হঠাৎ করেই তারা হাজির হয়। আরএসএফের পোশাকে তিন তরুণ এসে আকাশে গুলি ছুড়ে বলে ‘থামো’। এরপর তারা আমাদের বেধড়ক মারধর করে এবং পোশাক ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি নারী হয়েও তল্লাশির শিকার হই।” 


ফাতিমা আবদুলরহিম, যিনি তার নাতি-নাতনিদের নিয়ে তাবিলায় পৌঁছেছেন, বলেন, “তারা ছেলেশিশুদের মারধর করে, সব সম্পদ লুটে নেয়। আমাদের কিছুই রাখেনি। শুনেছি, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে।” এক তরুণী রাওয়া আবদাল্লা জানান, তার বাবা এখনো নিখোঁজ। অনেকের মতোই তিনিও জানেন না, তার প্রিয়জনেরা বেঁচে আছেন কি না।


একজন বেঁচে থাকা ব্যক্তি বলেছেন, “আরএসএফের সেনারা বন্দীদের গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছিল।” 


এছাড়াও, আরএসএফ শহরের চারপাশে এমনভাবে পরিখা খনন করেছে যাতে কেউ পালাতে না পারে। তাদের লক্ষ্য হলো শহরকে পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখা। এক কথায় এই সংঘাতে মানুষের জীবন একেবারেই মূল্যহীন।


কেউ কেউ তাওইলা শহরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয় খুঁজছেন। এল-ফাশার থেকে আসা মানুষগুলো এমন এক পরিস্থিতি থেকে আসছে যাকে কেবল নরকীয় দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।


এছাড়া, কেবল আরএসএফই বেসামরিক নাগরিকদের উপর সহিংসতা চালাচ্ছে না। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন অনুসারে, সুদানের সশস্ত্র বাহিনীও (এসএএফ) বেসামরিক জনগণের উপর নিষ্ঠুর আক্রমণ করেছে। 


২০০০ সালের শুরুর দিক থেকেই পশ্চিম দারফুরে জানজাউইদ থেকে আগত র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সকে সুদান লিবারেশন আর্মি (SLA) এবং জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি মুভমেন্ট (JEM) এর মতো অ-আরব আফ্রিকান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই এই মিলিশিয়ারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও চরম সহিংসতা চালানো শুরু করে।


হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "আরএসএফ ব্যাপক যৌন সহিংসতা, বিশেষ করে গণধর্ষণ এবং লুটপাটও করেছে। তারা  শহর ও গ্রাম ধ্বংস করেছে, প্রায়শই অগ্নিসংযোগ করে এবং ব্যাপকভাবে ত্রাণ সরবরাহ লুট করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতও সুদানে স্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ দেখে।


বর্তমানে এল-ফাশারে প্রায় ২,৬০,০০০ বেসামরিক মানুষ আটকা পড়েছে , যাদের অর্ধেকই শিশু। কয়েক মাস ধরে, শহরটি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মিলিশিয়া অবরুদ্ধ করে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। 


দীর্ঘদিন ধরে, চাদের সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে দারফুর প্রদেশে অবস্থিত এল-ফাশারে খাবার পৌঁছাচ্ছে না। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অনেক মানুষ এখন পশুখাদ্যের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে।


প্রসঙ্গত, ২৬ অক্টোবর উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহরটি সুদানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল নেয় আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ। শহর দখলের পরপরই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায় ও গণহত্যার মতো ভয়াবহ নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়।


এল-ফাশের শহরটি আরএসএফের দখলে যাওয়ার পর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, আর যারা পালাতে পেরেছেন, তারা মানবিক সাহায্যের আশায় আশ্রয় নিয়েছেন তাবিলা এলাকায়।


জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঘটনাটিকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।


আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) বুধবার রাতে এক ভাষণে বলেন, তার বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। 


তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এই প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।


No comments:

Post a Comment

Pages