সময় ডেস্ক : সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে গত ১০ সেপ্টেম্বর এসএমপির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মো. আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী (পিপিএম-সেবা)। তিনি এর-ই মধ্যে যানজটমুক্ত সিলেট নগরী গড়তে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় নগরবাসী তার ওপর কিছুটা আস্তা রাখতে শুরু করেছেন। তবে এখনো মুষ্টি কয়েক পুলিশের শেল্টারে এসএমপি এলাকায় জুয়া পরিচালিত হওয়ায় পুরপুরি আস্তা রাখতে পারছেন না।
বারুদের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত সোবহানীঘাট পু্লিশ ফাঁড়ির পেছনে প্রকাশ্যে চলছে তীরজুয়া। আল আমিন নামের এক ব্যক্তি সেটা পারিচালনা করছে। সেটার শেল্টার দিচ্ছেন ফাঁড়ির আইসি সিলেটের বাসিন্দা আবু বকর এবং টু আইসি জিবরাত ধর।
প্রতিদিন ফাঁড়ির মুন্সি খলিলের মাধ্যমে সোবহানীঘাট পু্লিশ ফাঁড়ির নামে ৫ হাজার টাকা আদায় হচ্ছে। তার মধ্যে আইসি ও টু আইসি ৩ হাজার, মুন্সি খলিল ১ হাজার এবং টহল পার্টিকে দেয়া হয় ১ হাজার টাকা।
অনুরূপ সোবহানীঘাট কাঁচাবাজার এলাকার আরেকটি তীরজুয়ার বোর্ড থেকে একইব্যক্তি খলিলের কালেকশনে ফাঁড়ির আইসি, টু আইসি ও ডিউটি পুলিশ নিচ্ছে দিনে আরো ৫ হাজার টাকা। কাঁচাবাজারের বোর্ডটি পারিচালনা করে ঈসমাইল নামে একজন। এভাবে সোবহানীঘাট পু্লিশ ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকাতে তীরসহ নানা জুয়া খেলা প্রকাশ্যে চলছে ফাঁড়ি পুলিশের মদদে।
ফাঁড়ি সদস্যরা আরেকটি অপকর্ম করছে অতি গোপনে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ও পু্লিশ ফাঁড়ি এলাকার ব্যবসায়ী সূত্র জানায়- বিভিন্ন কাজে শহরে আসা গ্রামের সহজসরল মানুষদের টার্গেট করে পকেট ভারি করছে সোবহানীঘাট ফাঁড়ি পুলিশের কয়েকজনের একটি টিম।
তারা টার্গেটকৃতদের ধরে তল্লাশির নামে ফাঁড়িতে নিয়ে মামলায় ফাঁসানোসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করে ছেড়ে দেয়। পুলিশী ঝামেলা এড়াতে কিংবা মানসম্মানের ভয়ে বিষয়টি অনেকে প্রকাশ না করায় অসাধু পু্লিশ সদস্যদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে গুরুতর অভিযোগ আছে।
আর আইসিকে ম্যানেজ করে প্রায়দিন ছোটছোট পিকআপ ও যাত্রীবাহী লেগুনার সিটের নিচসহ ভিন্ন কৌশলে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় চোরাই পণ্য পাইকারি বাজার কালিঘাটে ঢুকছে।
নবাগত পু্লিশ কমিশনারের কঠোর নির্দেশনার পর সিলেট নগরীর নানা এলাকায় ডিবি পু্লিশ অভিযান পারিচালনা করলেও অদৃশ্য কারনে সোবহানীঘাট ফাঁড়ি এলাকার জুয়ার বোর্ডগুলোতে তেমন কোনো অভিযান হয় না বলে জানা যায়।
এদিকে, সোবহানীঘাট পয়েন্টে সর্বক্ষণ যানজট লেগে থাকলেও যানজট নিরসনে কর্তব্যরতদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ ওঠেছে। সরজমিন দেখা যায়, ট্রাফিকপুলিশের টিআইর রেস্টের জন্য সোবহানীঘাট ফাঁড়িতে একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) মাগরিবের পর সার্জেন্ট রাজন ইবনেসিনা হাসপাতালের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ কাগজপত্র নিয় কয়েকজনের সাথে গল্পগুজবে মশগুল থাকতে দেখা যায়। পরদিন বুধবার বিকেলে সেই কক্ষে পোষাক পরিহিত দুই ট্রাফিক সদস্যের একজন কিউআর টিমের সদস্য সার্জেন্ট আলম পোষাকের বুতাম খোলে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমে মগ্ন ছিলেন। অথচ সে সময় ফাঁড়ির সামনের পয়েন্টে তীব্র যানজট সামাল দিতে কনস্টেবল জ্যোতির্ময় এবং পরদিন কনস্টেবল কয়েছকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, নগরীর প্রবেশদ্বার হুমায়ুন রশিদ চত্বরের পুলিশ বক্স টিআই মোশারফের ক্লাব ঘরে পরিণত হয়েছে। টিআই নিজে ইন্টার্নেটের রাউটার লাগিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে সড়কের চেয়ে ট্রাফিক সদস্যদের মোবাইল নিয়ে মোশারফের ক্লাব ঘরে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা পুলিশের বড় কোনো অফিসার সড়ক দিয়ে গেলে শুধু তখনি সড়কে ট্রাফিক সদস্যদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে গুরুত্ব না দেয়ায় নগরে যানজটের আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন নগরবাসী।
এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী ও নগরবাসী নবাগত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র : সাপ্তাহিক বাংবার বারুদ



No comments:
Post a Comment