অপরদিকে এই খুনের ঘটনার আলোচিত দুই আসামী এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন। যদি ঘাতক শাব্বির শিহাব খুনের ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ দ্বারা জবাব বন্ধি দিয়েছে। অপরদিকে গত সপ্তাতে সন্ধিগ্ন ৩ আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা করম উদ্দিন। কিন্তু এরা রিমান্ডে কি বলেছে তা প্রকাশ্যে আনতে রাজি নন মামলার আয়ু। তদন্তের স্বার্থে নাকি তা গোপন রাখা হয়েছে।
সূত্রমতে কানাইঘাটে গত ৮ মাসে ৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবগুলোই আলোচিত। কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আউয়াল ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থানায় যোগদান করেন। তার যোগদানের পর গত ৮ মাসে গড়ে প্রতিমাসে একটি খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে অনেকগুলো খুন সংগঠিত হলেও প্রকৃত আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় খুনের ঘটনা বাড়ছে।
বর্তমান ওসি যোগাদানের পর প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ৭ নভেম্বর। সেদিন রেজওয়ান আহমদ নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয় সুরইঘাট এলাকার একটি পুকুর থেকে। নিহত রেজওয়ান উপজেলার ২ নম্বর লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গত ৮ নভেম্বর উপজেলার ৭নং দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউপির ধলিবিল দক্ষিণ নয়াগ্রামের মসজিদের মুতাওয়াল্লী ফয়জুল হোসেনকে জবাই করে খুন করে তাঁরই চাচাতো ভাই সুলতান আহমদ। সুলতান আহমদকে স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশে সোপার্দ করেন। গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা। নিখোঁজের আট দিন পর ১০ নভেম্বর উদ্ধার হয় মুনতাহার লাশ। পরিকল্পিত ভাবে অপহরণ করে শিশুটিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর ২০২৪ শশুড় বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চতুল এলাকার জুবায়ের আহমদের লাশ। চতুল সরুফৌদ গ্রামের শ্বশুরবাড়ির গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় জুবায়ের আহমদ (৫০) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৮ নভেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় কানাইঘাট বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন হন পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও পৌরসভার ধনপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মুমিন (২৮)। পূর্ববিরোধের জের ধরে খুন করা হয় মুমিনকে। গত ২২ নভেম্বর কানাইঘাট বাজার থেকে আইসক্রিম বিক্রেতা লাল মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শুধু গত নভেম্বর মাসেই কানাইঘাটে ৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় সাতবাক ইউনিয়নের লোভারমুখ বাজারের পার্শ্বে সালিক আহমদ (৪৮) খুন হন। গত ১০ মার্চ উপজেলার ডাউকেরগুল গ্রামের সৌদি প্রবাসী আব্দুল মতিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। গত ১৭ মার্চ দেশে ছুটিতে এসে খুন হন ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের খালোপার গ্রামের কাতার প্রবাসী রশিদ আহমদ (২৮)। গত ২৭ মে একই গ্রামের জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন (৪২) খুন হন।
কানাইঘাট উপজেলায় প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন, অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং অপহরণের ঘটনায় জনমনে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা যায়, ওসি হওয়ার যোগ্য নয় এমন পুলিশ কর্মকর্তাকে থানার অভিভাবক করা হয়। পূর্বে তিনি সিলেট কোতয়ালী থানার এসআই, এয়ারপোর্ট থানা ও শাহপরান (র.) থানায় সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও সিলেট বিমান বন্দর থানার ইমিগ্রেশনে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। আব্দুল আউয়ালের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায়। ছাত্র জীবনে তিনি জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগার হয়ে উঠেন।
কানাইঘাট থানায় আব্দুল আউয়ালের যোগদানের পর থেকে এলাকার আইনশৃংখলার অবনতি এলাকায় চোরাচালান বেড়ে যায়। চোরা কারবারিদের সাথে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসাবে পরিচিত কানাইঘাট-সিলেট বোরহান উদ্দিন রোড, হরিপুর গাছবাড়ী বাইপাস সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দিনে-রাতে ভারতীয় গরু-মহিষ, চিনি, চাপাতা, কসমেটিক্স সিলেট হয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এই চোরাচালানের গাড়ি থেকে চাঁদাবাজী একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিহাব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জনসাধারণ মনে করছে।
সোজা ও সহজ-সরল মানুষ সাজা ওসি চিনি চোরাকারবারিদের সাথে অন্ধকার হয়ে ওঠেন ভয়ংকর। সূত্র বলছে, কানাইঘাট থানা এলাকায় ভারতীয় চোরাচালানের ব্যবসা এখন বেশ জমজমাট। যার ফলে চোরাকারবারিরা থানার এক কনেষ্টবলকে আটক করে থানায় না দিয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় হস্তাস্তর করেছিলো। তখন ওসির ভূমিকা ছিলো নিরব দর্শকের মতো। বিভাগীয় মিটিংয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে ডিআইজির এতো কঠোর বক্তব্যর পরও কানাইঘাটে থেমে নেই ভারতীয় চোরাচালান। গুঞ্জন ওঠেছে- ওসি আব্দুল আউয়ালকে সরিয়ে কানাইঘাট থানায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ময়মনসিংহ থেকে সিলেট রেঞ্জে বদলী হয়ে আসা ওসি সফিকুর রহমান।
এ বিষয়ে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, কানাইঘাটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ। কানাইঘাটে হত্যাকাণ্ডগুলো অনাকাঙ্খিত। এসব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান ও তদন্ত চলমান রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য নিতে সরকারি ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।
No comments:
Post a Comment