সময় ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে জিপিএ ৪.১১ পেয়ে এসএসসি পাস করলেন সাংবাদিক দম্পতি মো. কাইসার হামিদ (৫১) ও মোছা. রোকেয়া আক্তার (৪৪)। এবার দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নতুন উদাহরণ তৈরি করেছেন তাঁরা।
কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়া আক্তার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে নাসরিন সুলতানা স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিন সুলতানা স্নাতক শেষ বর্ষে, তৃতীয় সন্তান মাইমুনা নার্সিংয়ে অধ্যয়নরত। ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন নবম শ্রেণিতে ও আবদুল্লাহ ফাহিম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এ দম্পতির শিক্ষাজীবন নতুনভাবে শুরু হয় নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে।
সেখান থেকেই তাঁরা কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। দুজনের বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শিক্ষিত। এসএসসি পাস না করায় তাঁদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তাঁরা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।
মেয়ে জেসমিন বলেন, 'আমাদের মা–বাবার এসএসসি পাস করা আমাদের ভাই বোনদের জন্য গর্বের বিষয়। এটা আমাদের কাছে আনন্দ আর প্রেরণার ব্যাপার।'
রোকেয়া আক্তার বলেন, 'অল্প বয়সে বিয়ে হয আমাদের, এরপর সন্তান। তাই আর পড়াশোনায় যাওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এই কষ্ট বুকের মধ্যে লালন করতাম। অবশেষে বুঝলাম, সাহস করে পরীক্ষা না দিলে শান্তি মিলবে না। এবার সেটা করে দেখালাম।'
কাইসার হামিদ বলেন, 'সাংবাদিকতায় আমার বয়স ৩০ বছরের বেশি। সমাজ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু একটাই কষ্ট ছিল- এসএসসি পাস না করা। বাইরে গেলে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করতেন, এমনকি বলতেন, ‘এসএসসি না পাস করে সাংবাদিকতা করেন কীভাবে?’ সেসব কথা খুব লাগত। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, পরীক্ষা দেব।'
No comments:
Post a Comment