তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের ভীত রচিত হয় : ব্যারিস্টার এম এ সালাম - সময় আমাদের (somoy amader)

শিরোনাম


Saturday, 12 July 2025

তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের ভীত রচিত হয় : ব্যারিস্টার এম এ সালাম


নিজস্ব প্রতিবেদক : "টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ"। "বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফায়ছালা হবে রাজপথে-সেটাই হয়েছে। পরিশেষে, "দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ"-এই স্লোগানেই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের দাবানল শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের পঠভূমি চূড়ান্ত রুপ নেয়। অতঃপর ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলমতকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দেন। মূলতঃ এভাবেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের ভীত রচিত হয়। এভাবেই ২০২৪ -এর জুলাইয়ে অতীতের সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বেই জনাব তারেক রহমানকে মহানায়কে পরিণত করেছে। জনাব তারেক রহমান এই দীর্ঘ লড়াইয়ের পরই জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও খুনী হাসিনার কবল থেকে দেশ ও দেশের আপামর জনগণকে মুক্ত করেছেন। এই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে। 


শনিবার (১২ জু্লাই) দুপুরে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের হল রুমে সাংবাদিকের সাথে "জু্লাই গণঅভ্যুত্থান: আগামীর বাংলাদেশ এবং তারেক রহমান" শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক

ব্যারিস্টার এম এ সালাম।


তিনি বলেন, সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের উপস্থিত সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ এবং সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম, আদাব ও শুভেচ্ছা। আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি- মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। সেই সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সিলেটের কৃতিসন্তান জেনারেল আতাউল গণি ওসমানিকে, একইসঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদদের। আমি আরও স্মরণ করছি বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদের অপশাসনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং পরিশেষে ২৪' এর জুলাই অভ্যুত্থানে আবু সাইদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ ও সাংবাদিক এটিএম তুরাব সহ সিলেটের ১৩ জন সহযোদ্ধা এবং ঝরে যাওয়া হাজারো ছাত্র-তরুণদের তাজা প্রাণের। যারা এই অভ্যুত্থানে আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন আমি সেই ছাত্র-তরুণদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।


প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আজকের এই মতবিনিময় সভার মূল প্রতিপাদ্য 'জুলাই অভ্যুত্থান: আগামীর বাংলাদেশ এবং তারেক রহমান'-দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই অভুত্থান একদিন নয়, দুই দিন নয় এমনকি বছরও নয়, দীর্ঘ ১৭ বছর ব্যাপী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রেক্ষাপট তৈরী হয়। দীর্ঘ এই সময়ে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন, লক্ষ লক্ষ গায়েবী মামলা, গ্রেপ্তার, হত্যা, বাক-স্বাধীনতা হরন, লুটতরাজ এবং গুম-খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সিলেটের কিংবদন্তী নেতা এম ইলিয়াছ আলী, ইফতেখার হোসেন দিনার, জুনেদ আহমদ ও আনসার আলী সহ গুম হওয়া অসংখ্য পরিবার এখনও তাদের স্বজনদের কোন সন্ধান পায়নি।


আপনারা জানেন, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক তাঁর নিজ বাড়ী থেকে তাঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী করা হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন, জনাব তারেক রহমান দেখা করতে পারেননি মায়ের সাথেও। ছোট ভাই জনাব আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করলেও শেষবারের মতো তাঁর মুখখানা দেখতে পারেননি। বিএনপি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এসব করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী সরকার।


ব্যারিস্টার এম এ সালাম

বন্ধুগণ, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী জনাব তারেক রহমান তাঁর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থেকেও বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন শক্ত হাতে চালিয়ে যান। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দীর্ঘ আন্দোলন এবং দেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার অবিচল আস্থা তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। তাই তাঁরই নেতৃত্বে মূলত গড়ে ওঠে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে উঠে এবং হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরে পাবার লক্ষ্যে এক ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরী করে। জনাব তারেক রহমানের অগ্নিঝরা বক্তব্যে উঠে আসে বেশ কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান। যেমন, "টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ"। "বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফায়ছালা হবে রাজপথে-সেটাই হয়েছে। পরিশেষে, "দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ"-এই স্লোগানেই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের দাবানল শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের পঠভূমি চূড়ান্ত রুপ নেয়। অতঃপর ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলমতকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দেন। মূলতঃ এভাবেই জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের ভীত রচিত হয়। এভাবেই ২০২৪ -এর জুলাইয়ে অতীতের সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বেই জনাব তারেক রহমানকে মহানায়কে পরিণত করেছে। জনাব তারেক রহমান এই দীর্ঘ লড়াইয়ের পরই জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও খুনী হাসিনার কবল থেকে দেশ ও দেশের আপামর জনগণকে মুক্ত করেছেন। এই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে। তাই আজকে এটি সময়ের দাবি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।


এম এ সালাম ববলেন- উপস্থিত সুহৃদবৃন্দ, জুলাই অভূত্থানের পরবর্তীতে জনাব তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল এক মহানায়কের মত। তিনি গণঅভুত্থান পরবর্তী সময়ে সহিংসতারোধে দেশবাসী তথা ছাত্র ও তরুণ সমাজকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। নিজের দলকে তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ করেছেন। অভিভাবক হিসেবে শক্ত হাতে দেশ ও দলের হাল ধরেছেন। অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে যখন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যখন ভারতে পালালো, এমন পরিস্থিতিতে দেশে যে ধরনের হত্যাযজ্ঞের আশঙ্কা আওয়ামী লীগ করেছিল তার কিছুই ঘটেনি। বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের প্রতিনিয়ত কঠোর নির্দেশনা, কেরিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে শান্তি-শৃংখলা বজায় ছিল সারাদেশে। সেসময় তারেক রহমানের নির্দেশে পুলিশশূণ্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দেশের দুঃসময়ে তারেক রহমানের সেই ভূমিকা সাধারণ মানুষের মাঝে অভাবনীয় প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে, তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে নিয়মিত যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার সবগুলোই ছিল অসাধারণ, সময়োপযোগী, পরিপক্ক-এমন আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সাধারণ মানুষের ভাষ্য- বক্তব্যে তারেক রহমান কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি, ছিলনা কোনো অযাচিত বাগাড়ম্বর, করেছেন মার্জিত সমালোচনা, দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। যদিও কিছুদিন আগেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আরোপিত বিধি-নিষেধের কারণে তিনি ছিলেন অস্পৃশ্য। তার বক্তব্য প্রচার করা যেতোনা দেশে। গত ১৭ বছর সম্মিলিত মিডিয়া ট্রায়াল চলেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সরকার যেভাবে তারেক রহমানকে দেখাতে চেয়েছে, যেভাবে উপস্থাপন করেছে, জেন-জি'র এই প্রজন্ম তাঁকে সেভাবেই জেনেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের দূরদর্শী, দিকনির্দেশনামূলক, পরিপক্ক বক্তব্য, ইতিবাচক মানসিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শুনে সকলের মনে নতুন করে জায়গা করে নিয়েছেন নির্যাতিত এই মহান নেতা।


উপস্থিত গুণীজনেরা, জনাব তারেক রহমান নেতৃত্বের এক মহাকাব্যের নাম। তিনি এখন আর কোন ব্যক্তি নন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। আমাদের প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী নেতা জনাব তারেক রহমান আগামীর বাংলাদেশকে দেখতে চান 'মানবিক, বৈষম্যহীন ও নিরাপদ বাংলাদেশ' হিসেবে। তিনি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য প্রণীত ৩১ দফা রূপরেখার মাধ্যমে এর পূর্ণাঙ্গ ও পরিশীলিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর দেয়া রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা তাঁকে একজন ভিশনারি রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই ৩১ দফার মধ্যেই আছে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এই ৩১ দফার মধ্যেই আছে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন। যেই স্বপ্ন আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই ৩১ দফা রূপরেখা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপি'র ভিশন-২০৩০ এবং তারেক রহমান ঘোষিত ২৭দফা কর্মসূচীর আলোকে যুগপৎ আন্দোলনে শরীক সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশোধিত ও সম্প্রসারিত রূপে প্রণীত।


মহান নেতা জনাব তারেক রহমান আগামীর বাংলাদেশ এমন দেখতে চান যেখানে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। প্রত্যেকটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। নিজের ও পরিবারেরর আর্থসামাজিক নিরাপত্তা এবং সঞ্চয় নিশ্চিত হবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যা ঘুচবে। নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। আমাদের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ-এর শিক্ষা নিশ্চিত হবে। মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে। কৃষক, শ্রমিক এবং সব কর্মজীবী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত হবে। তাই আমাদের সামনে এখন যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দেশে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দেলনে বীরদের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যাতে বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।


বন্ধুগণ, আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনাব তারেক রহমানের রয়েছে মহা পরিকল্পনা। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের প্রথম ১৮০ দিনে কি করা হবে সেই পরিকল্পনার কথা


ব্যারিস্টার এম এ সালাম আরো বলেন- ইতোমধ্যে জানিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায়-প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে এবং তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। দেশের ও প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। স্বাস্থ্য সেবায়-রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং জনসচেতনতা তৈরির একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্যানিটেশন এবং পুষ্টির উপর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নে প্রায় প্রান্তিক চার কোটি পরিবারের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ লক্ষ দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারের জন্য 'ফ্যামিলি কার্ড' চালু করা হবে। শহীদদের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে- জুলাই অভ্যুত্থানে এবং ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের তালিকা প্রস্তুত করে নিজ-নিজ এলাকায় তাদের নামে সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে। শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হবে। কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়নে-কৃষকের নামে জমির পরিমাণ ও খতিয়ানসহ প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত 'ফার্মার্স কার্ড' চালু করা হবে। শিল্প খাতে-GDP সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ১ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে-ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নের জন্য দেশব্যাপী প্রোডাকশন ফেসিলিটি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হবে।


বন্ধুগণ, প্রবাসী কল্যাণের ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা কর্ম ও বিমানবন্দরে যাতে তারা হয়রানির শিকার না হন সেটি নিশ্চিত করা হবে। নগর ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় ৫ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি বৃক্ষ রোপনের কর্মসূচি নেয়া হবে। আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে সকল অপকর্ম ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে -এক কোটি মানুষের জন্য নতুন কর্মের সংস্থান করা হবে। বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করা হবে। অবকাঠামো ও শিল্প অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গড়ে তোলা হবে। নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদকে টেকসইভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে।


উপস্থিত বন্ধুরা, চলমান রাজনীতীতে একটি আলোচিত ইস্যু সংস্কার। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংস্কার করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যিনি চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পূনঃ প্রবর্তন করেছিলেন এবং ক্রেয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই সংস্কারগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিএনপিই একমাত্র দল, যার উপরে জনগণ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখতে পারেন।


সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান বলেছেন, "জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চিন্তা-ভাবনা করে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উত্তম প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। প্রস্তাব ভালো হলেও সব প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, সেটি বিবেচনা করার জন্য আপনাদের বিনীত আহ্বান জানাব। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার দাবি তুলেছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে এই ব্যবস্থা কতটুকু উপযোগী?তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে, বাংলাদেশকে তাঁবেদারমুক্ত রাখতে হলে এই মুহূর্তে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার আড়ালে পুনরায় দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অজান্তে পতিত পরাজিত ও পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ তৈরির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না এই বিষয়টিও আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। আমি মনে করি নিত্যনতুন বিষয় যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।"


ব্যারিস্টার এম এ সালাম বলেন- প্রিয় বন্ধুগণ, আমাদের মনে রাখতে হবে, সবার আগে বাংলাদেশ। একটি দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ ও মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমাহান লক্ষ্যে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐক্য প্রয়োজন। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচিগত পার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। হাজারো শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী এই ঐক্য গড়ে উঠেছে। বিগত জুলাই অভ্যুত্থান এর জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিটি ইস্যুতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া জরুরি নয়। তবে অবশ্যই জাতীয় ইস্যুতে ও জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে -এও বলেছেন "আমি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিংবা আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না, আমি আন্দোলন করছি দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা, আপনাদের ভোটের অধিকার এবং রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনার জন্য"।


উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুগণ, ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাগারে নির্যাতিত হয়েছেন, নির্বাসিত হয়েছেন অনেকেই। অনেক জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার আজও হয় নাই। তাই আপনারা দেশ ও জাতির বিবেক। মুক্ত-এ গণমাধ্যমে আপনাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আপনাদের রয়েছে অনেক ত্যাগ এবং গৌরবান্বিত ভূমিকা। তাই জনগণের বাংলাদেশ গড়তে অতীতের সকল কালিমাকে গুছিয়ে বিশ্ব সেবায় আমাদের উঁচু করে দাঁড়াতে আপনারা এগিয়ে আসবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের মৌলিক চাহিদা শুধু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানে সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তাই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আসুন সকলে মিলে জনাব তারেক রহমানের আগামীর বৈষম্যহীন, সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মানের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলি বিশ্ব সভায়।


আগামী দিনে আর কোনো অপশক্তি যেন আমাদের দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, সংবিধান লংঘনকারী পতিত, পরাজিত পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কেউ যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে, আমি ও আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, এসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে। বিএনপি দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থাকে এমন একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সব রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক থাকবে জনগণ। জনগণই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহীতামূলক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত মেয়াদের পর সেই সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও জনগণের হাতে থাকবে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে এভাবে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া গেলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।


পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনাব তারেক রহমানের ভীশন একটি সাম্য ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে সবাই মিলে কাজ করি।


প্রিয় বন্ধুগণ। দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্যের সঙ্গে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের সকলকে তিনি ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানান।


No comments:

Post a Comment

Pages